ফরিদপুর :
ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার ও নিউমার্কেটের সংযোগ স্থাপনকারী কুমার নদীর বেইলি ব্রিজ এখন স্বস্তির ট্রানজিট। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শহরকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত করার শুভ সূচনা হিসেবে এটাকে দেখছেন সাধারণ মানুষ।
লোহার ব্রিজ নামে পরিচিত এই বেইলি ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ কুমার নদী পারাপার হয়। জেলা শহরের বাইরের থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ শহরের প্রবেশ মুখে নেমে শরীয়তুল্লাহ বাজার হয়ে হেঁটে নিউ মার্কেট, চকবাজার, থানার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন এই সেতু দিয়ে।
শুধুমাত্র হেঁটে চলার জন্য নির্মিত সেতুটি গত সাড়ে তিন বছর ধরে অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের কাছে জিম্মি হয়েছিল। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র হাঁটার এই সরু ব্রিজটিকে হকারদের কাছে ভাড়া দিয়ে আসছিল। ফলে প্রতিনিয়তই নাজেহাল হতে হতো সাধারণ পথচারীদের। ছিনতাই, পকেটমারসহ ছোটখাটো অঘটন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে নারীদের জন্য এই বেইলি ব্রিজ ছিল খুবই অনিরাপদ। ভিড়ের সুযোগে যৌন হয়রানির ঘটনা ছিল নিত্য নৈমত্তিক। গত তিনদিন ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বেইলি ব্রিজটি সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে নদীর এপার ওপার যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।
সেতু পারাপারে সময় শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এমন পরিবেশটি চেয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমন পরিবেশ যেন এখন থেকে বজায় থাকে সে প্রত্যাশাও তাদের। বেইলি ব্রিজের চাঁদাবাজি বন্ধ করে জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন জ করায় বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে আজাদ ও ফরিদপুরের প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানালেন ব্রিজটি পার হওয়া কয়েকজন নারী।
উল্লেখ্য নির্বাচনী প্রচারণায় স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ী এ কে আজাদ প্রতিনিয়তই ফরিদপুর শহরকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করার অঙ্গীকার করে এসেছেন। এমপি হওয়ার পর পরই ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন পদক্ষেপ আশাবাদী করে তুলেছে সাধারণ মানুষকে।
ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, আমরা এই দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। নতুন নেতৃত্ব এভাবেই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের শহরকে একটি বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন -এটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা।
স্থানীয় হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজারের ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ জানান, বেইলি ব্রিজের ওপর অবৈধভাবে বিক্রি করা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানোর কারণে মূল বাজারে লোকজনের আগমন ঘটতো কম। আমরা সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে, দোকান ভাড়া করে কর্মচারী রেখে ব্যবসা করি, অথচ এক শ্রেণির অসাধু লোক ওই ব্রিজের ওপর হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। এটি বন্ধ হয়েছে, আজ তিনদিন আমরা স্বস্তিতে আছি, বাজারেও বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমি নিজে ফোর্স নিয়ে বেইলি ব্রিজকে দখলমুক্ত করেছি। জন গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি এখন থেকে দখলমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি ফরিদপুর শহরের যেসব স্থানে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলের কারণে জনগণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, সেসব স্থান থেকে অভিযোগ পেলে ফরিদপুর কোতোয়ালি পুলিশ, ট্র্যাফিক বিভাগ ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সমন্বিতভাবে পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে জনগণের স্বাভাবিক ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করব।
Leave a Reply