ফরিদপুর সংবাদদাতা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় সদলবলে হামলা চালিয়ে স্ত্রী, শাশুড়ি ও স্ত্রীর বোনদের মারপিট, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এসময় ওই বাড়িতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ৮২ বছর বয়স্ক বিধবা পত্নিকেও চুলির মুঠি ধরে আহত করা হয়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর চারদিন অতিবাহিত হলেও মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থানায় মামলা হয়নি। হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা গ্রহণে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে পুলিশ বলছে, মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর অভিযুক্ত স্বামীর অভিযোগ, তাকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য উল্টো আহত করে তারা। তিনিও থানায় অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, ভাঙ্গা পৌর এলাকার কাপুড়িয়া সদরদি গ্রামের মারজানা বেগমের বাড়িতে গত শুক্রবার দুপুরে এ হামলা চালানো হয়। মারজানা বেগম লিখিত অভিযোগে জানান, পাঁচ বছর আগে তার সেজো মেয়ে আন্নি আক্তারের (২২) সাথে একই মহল্লার আলমগীর খানের ছেলে জুবায়ের খানের (২৫) বিয়ে হয় ভালোবাসার সম্পর্কে। তাদের দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তবে বিয়ের এক বছর না যেতেই জুবায়ের যৌতুকের জন্য আন্নিকে মারধর করতো। এর আগে যৌতুকের জন্য আন্নিকে মেরে রক্তাক্ত জখমের পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। মাঝেমধ্যেই মোবাইলে একথা জানিয়ে তার মেয়ে কান্নাকাটি করতো। এভাবে কয়েকবার তাকে বাড়ি নিয়ে এলে স্বামীর বাড়ির লোকেরা লোকজনকে বলেকয়ে আবার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতো। মারজানা বেগম অভিযোগ করেন, সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই শুক্রবার দুপুরে জুবায়ের ও তার বাড়ির প্রায় ১৫ জনের একদল নারী পুরুষ তাদের বাড়িতে হামলা করে। তারা বর্বরভাবে তার তিন মেয়ে আন্নি, মনিরা ও এথিনা এবং ছোট মেয়ে জামাই মিঠুকে লাঠি ও রড দিয়ে মারপিট করে। এসময় তার বয়োবৃদ্ধ মা রিজিয়া বেগম (৮২) কেও চুলির মুঠি ধরে তারা মারপিট করে। এরপর তারা আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং ওয়ারড্রবে রাখা ১৪ ভরি সোনার গহনা নিয়ে যায়। তাদের হাতে লাঠিসোটা ছাড়াও ছ্যান, রামদা ছিলো। মারজানা বেগমের বাবা মরহুম শামসুদ্দিন মোল্যা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। চার মেয়ের সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এদের মধ্যে সেজো মেয়ে এই আন্না। ফরিদপুরের সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালে তার সাথে জুবায়েরের বিয়ে হয়। আন্না আক্তার বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তাকে এভাবে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হচ্ছে। তার স্বামী তার ও মেয়ের কোন ভরণপোষণও দেয়না। এব্যাপারে জানতে জুবায়ের খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈদের আগে তার নানু মারা যান। শুক্রবার তাঁর মিলাদ ছিলো। এজন্য মেয়েকে আনতে তিনি তার মামা শ্বশুড়ের অনুমতি নিয়ে তাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গেলে তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করে তারা। পরে এলাকার লোকেরা তাকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, তার মেঝো ভায়রা সুমন গাড়ির ব্যবসা করেন। পরিচিত একজনের কাছে গাড়ি বিক্রি নিয়ে তার সাথে মনমালিন্য হয়। এখন তার পরামর্শে এসব হচ্ছে। আমি আমার ছোট্ট মেয়েকে দেখতেও যেতে পারিনা এখন। যৌতুক ও সোনা লুটের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে তিনি উল্টো সেদিন তার মোবাইল এবং তার বোনের গয়না কেড়ে নেয়ার পাল্টা অভিযোগ করেন। এব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের বলেন, এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
|
Leave a Reply